এটা কী পরেছো তুমি আরজু?বারান্দার এক কোণে দাঁড়িয়ে শাড়ির কুচি ঠিককরছিলাম। হঠাৎ কারোর গলার স্বর শুনে পিছনে ফিরেদেখি মিহির ভাই বারান্দার শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়েআছেন। তার ছোট ছোট চোখ দুটি কুঁচকে আছে। সেই সাথেকপালে সামান্য ভাঁজ পড়েছে। পরনের সাদাপাঞ্জাবিটার বুকের উপরের কয়েকটি বোতাম খোলা।ফলে তার লোমশ বুকের অনেকটাই দেখা যাচ্ছে। আমিদ্রুত তার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলাম। তিনি হেঁটে আমারকাছে এগিয়ে এসে বললেন," কালো রঙের শাড়ি পরেছো কেন?আমি আস্তে করে জবাব দিলাম," আম্মা শাড়ি পরতে বলেছিল তাই পরেছি।" কালো রঙের ছাড়া অন্য রঙের শাড়ি ছিল না? এটাইকেন পরতে হলো তোমাকে?মিহির ভাইয়ের ধমকে ঘাবড়ে গিয়ে তার কাছ থেকেকিছুটা দূরে সরে দাঁড়ালাম। নিজের অজান্তেই নাকিইচ্ছে করে তিনি আমার খুব কাছে এসে দাঁড়ালেন সেটাআমি বুঝতে পারলাম না। তিনি একবার আমারআপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে নিয়ে বললেন," এমনিতে তোমার গায়ের রঙ ঘুটঘুটে কালো। তার উপরআবার কালো রঙের শাড়ি পরেছো। এখন তোমাকেদেখতে ঠিক কিসের মতো লাগছে জানো?আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই তিনি বললেন," তোমাকে ঠিক কয়লার বস্তার মতো লাগছে দেখতে!তুমিও আর তোমার পরনের শাড়ি দুটোই কালো। এইঅবস্থায় তোমাকে দেখলে যে কেউই ভয় পেয়ে হৃদ রোগেআক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে।তার কথা শুনে লজ্জায় অপমানে আমার দুচোখ দিয়েপানি গড়িয়ে পড়তে লাগল। আমি কিছু না বলে নিঃশব্দেকাঁদতে লাগলাম। মিহির ভাই আমার কান্নাকে পাত্তানা দিয়ে থমথমে গলায় বললেন," এখনি এটা পালটে অন্য যেকোনো রঙের শাড়ি পরবে।ভবিষ্যতে আর কখনো কালো রঙের কাপড় পরবে না তুমি।কথাটা যেন মনে থাকে।বলেই হনহন করে বারান্দা থেকে চলে গেলেন। আমিএখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছি। এতটা অপমানের পরেও আমিএই শাড়িটাই পরে থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম। এবংকিছুক্ষণ পরে আমিও বারান্দা থেকে চলে আসতেই বসারঘরে এই বাড়ির সবাইকে বৈঠক করতে দেখলাম। এটাপারিবারিক বৈঠক হওয়ায় এই বাড়ির প্রত্যেক সদস্যইএখানে উপস্থিত আছেন। মিহির ভাইও আছেন। তিনি তারবাবার পাশে দামী সোফায় নরম কোশনে হেলান দিয়েখুব আরাম করে বসে সবার সাথে কথা বলছেন। আমি এইবাড়িতে থাকলেও এই পরিবারের কেউ না। তাই বসারঘরে সবার সাথে না বসে আমার রুমের দিকে এগিয়েগেলাম। কেন জানি মনে হলো মিহির ভাই আড়চোখেআমাকে দেখছিলেন। আমি আর সেদিকে না তাকিয়েসোজা রুমে এসে পড়ার টেবিলের কাঠের চেয়ারটাই বসেপড়লাম। এর কিছুক্ষণ পরেই আম্মা শাড়ির আঁচলে হাতমুছতে মুছতে রুমে ঢুকে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন।" কিছু বলবে?" একটু আগে মিহির বলছিল তুই নাকি ওর সাথে বেয়াদবিকরেছিস। ওর কথার কোনো জবাব দেসনি। তুই কেন এমনকরিস আরজু? যেই ছেলেটা আমাদের বিপদের দিনেপাশে এসে দাঁড়ালো। নিজেদের বাড়িতে আমাদেরথাকতে দিলো। সেই ছেলেটার সাথে বেয়াদবি কেনকরিস তুই? কেন সোজা মুখে কথা বলিস না ওর সাথে?আম্মার কথা শুনে আমার ভীষণ রাগ হলো। ঝট করে বসাথেকে দাঁড়িয়ে রাগী সুরে বললাম," উনার বাড়িতে আমরা আশ্রিত বলেই তো তার কথারজবাব দেই না।আম্মা আমার কথার অর্থ বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেসকরলেন," মানে কী?আমি আম্মার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উলটো জিজ্ঞেসকরলাম," আচ্ছা আম্মা আমরা এখনো কেন এই বাড়িতে থাকছি?আব্বার ব্যবসা তো এখন কিছুটা ভালো চলছে। তাহলেআমরা কেন ভাড়া বাড়িতে যাচ্ছি না?আমার প্রশ্নটা হয়তো আম্মার পছন্দ হয়নি। তাই হুট করেইআমাকে খেঁকিয়ে উঠলেন," ভাড়া বাসায় উঠলে মাস শেষে ভাড়া কি তুই দিবি?রাবেয়া আর শিমুকে বিয়ে দিতে গিয়ে তোর বাপ যে কতটাকার ঋণে পড়ছে। সেটা কি তুই জানিস? এত পাকনামিনা করে যা বলছি তাই করবি। মিহিরের সাথে সুন্দর করেকথা বলবি। তোর নামে যেন আর কোনো নালিশ না আসেআমার কাছে।আম্মা সেখানে আর না দাঁড়িয়ে বড় বড় পা ফেলে রুমথেকে বেরিয়ে গেলেন। তার যাওয়ার পরে আমি আবারচেয়ারে বসে পড়লাম।আমরা পাঁচ ভাইবোন। ইসরাত আপু, আমি, রাবেয়া, শিমুআর নোমান। ইসরাত আপু আমাদের সবার বড়। বিয়ে হয়েগেছে আরও আট বছর আগেই। দুটি ছেলের মা সে।দুলাভাইয়ের বিরাট ব্যবসা। এরপর আমি। গত বছর সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স পাশ করেছি। নোমান আমাদেরসবার ছোট আর একমাত্র ভাই। ও এইবার এস এস সিপরীক্ষার্থী। পড়াই ভীষণ অমনোযোগী সে। সারাক্ষণ শুধুব্যাট বল নিয়েই পড়ে থাকে। ক্রিকেট ওর প্রিয় খেলা।ওর ধ্যান জ্ঞান সবই সেই ক্রিকেট খেলা। রাবেয়া আরশিমু দুজনেই আমার ছোট। বছর দেড়েক আগে ওদেরদুজনেরই এক আয়োজনে বিয়ে হয়ে গেছে। বড়বোন রেখেছোট দুই বোনের বিয়ে! সমাজে আমাদের নিয়ে মানুষছিঃ ছিঃ করতে শুরু করেছিল। কিন্তু আমি আম্মা আরআব্বাকে সেসবে কান দিতে নিষেধ করে দিই। আমারছোট বোনদের আমার আগে বিয়ে হলে তাদের কীসমস্যা?যেখানে আমার নিজের কোনো আপত্তি নেই?মূলত রাবেয়া আর শিমুর বিয়ে দিতে আমিই আম্মাআব্বাকে রাজী করিয়ে ছিলাম। কালো বলে আমারবিয়ে হচ্ছিলো না। শুধু কালো না বিদঘুটে কালো আমি।আমার মাথার চুলের রঙ আর শরীরের চামড়ার রঙ এক। যারদরুন পাত্রপক্ষ আমাকে পছন্দ করে না। কে ই বা আর এমনঅসুন্দর মেয়েকে বিয়ে করতে চায়। সবাই যে সুন্দরেরবিলাষী! এইদিকে আমার বয়সও দিন দিন বেড়েযাচ্ছিলো। সেই সাথে ছোট বোন দুটিও বিয়ের উপযুক্তহয়ে উঠছিল। একসাথে তিন মেয়ের বিয়ের বুঝা আব্বারকাঁধে ছিল। যার ওজন প্রায় পাহার সম ঠেকছিল তাঁরকাছে। তাই আমি আব্বাকে রাজী করিয়ে সেই ওজনকিছুটা কমানোর চেষ্টা করি। রাবেয়া আর শিমু দেখতেসুন্দর আর ওদের গায়ের রঙ ফর্সা। তাই ওদের বিয়ে দিতেআব্বার কোনো কষ্টই পোহাতে হয়নি। এক আয়োজনেদুজনকে একসাথে বিয়ে দেওয়ার বুদ্ধিটাও আমারই ছিল।বিগত কয়েক বছর যাবত আমরা আর্থিক সংকটে ভুগছিলামবলে আব্বা আমার বুদ্ধিটাকে পরামর্শ হিসেবে নিয়েকাজে লাগালেন। দুজনের বিয়েই এক অনুষ্ঠানেই সেড়েফেললেন। এতে খরচ আর সময় দুটোই সাশ্রয় করা গেল।ওদের দুজনের বিয়ের পর আমার জন্য বিয়ের সমন্ধ আসাএকবারেই বন্ধ হয়ে গেল। অন্যদিকে আব্বার ব্যবসাও খুবনাজুক অবস্থায় চলছিল। তার উপরে রাবেয়া আর শিমুরবিয়ে জন্য আব্বা অনেক টাকা ঋণ করেছিলেন। যার সুদওছিল অনেক বেশি। মাসে মাসে সেসব সুদের টাকাপরিশোধ সহ সংসার খরচ সামলাতে আব্বা হিমসিমখাচ্ছিলেন। সব মিলিয়ে আমরা যখন হাবুডুবু খাচ্ছিলাম।তখনি আমাদের তিন রুমের ছোট বাড়িটি বিক্রি করেদিয়ে সব দেনা শোধ করে দিয়ে আব্বা আমাদেরকেনিয়ে এই বাড়িতে এসে উঠেন। মিহির ভাই নাকিআব্বাকে জোর করেছিলেনতাদের বাসায় এসে থাকতে। আব্বাও তখন বাড়ি বিক্রিকরে দিশেহারা হয়ে পড়ে ছিলেন। কোথায় থাকবেনকিছুই বুঝতে পারছিলেন না। বাড়ি ভাড়া নিলে প্রতিমাসে ভাড়াও তো ঠিক মতো দিতে পারবেন না। তাইউনার প্রস্তাবে খুশিমনে রাজী হয়ে গেলেন। এরপরআমাদের নিয়ে এই বাড়িতে থাকতে চলে আসেন। তাওপ্রায় নয় মাস আগে। এগারো তালা ভবনের চার তালারপুরো ফ্ল্যাটটি মিহির ভাই কিনে নিয়েছেন।আমাদেরকে এই ফ্ল্যাটের দুটি রুম থাকার জন্য দিয়েদেওয়া হয়। একটাতে পার্টিশনের ব্যবস্থা করে একপাশেআব্বা আর আম্মা আর অন্যপাশে নোমান থাকে। আরএকটাই আমি থাকি। বাকি পুরো ফ্ল্যাট নিয়ে মিহিরভাইয়ের পরিবার থাকেন। এখানে আসার পরই আমরাবুঝতে পারি মিহির ভাই ছাড়া তার পরিবারের আর কেউইআমাদের তাদের সাথে থাকাকে পছন্দ করেন না। কিন্তুআর কোনো উপায়ন্তর না থাকায় অনেকটা নিরুপায় হয়েইআমরা এখানে থাকতে বাধ্য হই। অনেক কিছু দেখেওদেখি না শুনেও শুনি না। নিজেদের অসহায়ত্বকে মেনেনিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে তাদের কখনো পরোক্ষ ভাবেকখনও বা প্রত্যক্ষ ভাবে করা অপমানগুলো হজম করতেথাকি। কিন্তু সবকিছু মানিয়ে নিলেও একটা বিষয়কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না আমি। আর সেটা হলোআমাকে করা মিহির ভাইয়ের অপমানগুলো। বিনা কারণেযখন তখন আর যেখানে সেখানে আমাকে অপমান করেনতিনি। আমার গায়ের কালো রঙকে নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্যকরেন। অথচ তার গায়ের রঙ ও কালো। সাদাপাঞ্জাবিতে তাকেও তো দেখতে ভয়ঙ্কর লাগছিল।কিন্তু আমি তো কখনো তাকে যাচ্ছে তাই বলে অপমানকরি না। কটুকথা শোনাই না। নাকি আমাদেরকে তাদেরবাড়িতে থাকতে দিয়েছেন বলে সেটার প্রতিদানআমাকে অপমান করে নিচ্ছেন তিনি!" আপু।নোমান ক্রিকেট খেলে বাড়িতে ফিরে ব্যাট কাঁধেনিয়ে সোজা আমার রুমে চলে এসেছে।" তুই বাইরে থেকে ফিরে এসে ফ্রেশ না হয়ে এখানে কীকরছিস?" আমার তিন হাজার টাকা লাগবে।" কেন?" ব্যাচের সবাই কক্সবাজার যাবে ঘুরতে। জনপ্রতি সাতহাজার করে টাকা পরেছে। কিন্তু আমি ক্যাপ্টেন হওয়ায়মাত্র তিন হাজার টাকায় যেতে পারছি।" তিন হাজার টাকা তোর কাছে মাত্র লাগে?তুই এখন আর খুব ছোট নেই নোমান। সামনের মাসে তোরসতেরো বছর পূরণ হবে। এতদিনে তোর কলেজে ভর্তিহওয়ার কথা। কিন্তু তুই ক্রিকেট আর ঘুরাঘুরি নিয়ে মেতেথেকে অমনোযোগী হয়ে পড়াশোনায় পিছিয়ে যাচ্ছিস।" আহ আপু এত প্যাচাল না করে টাকার ব্যবস্থা কোরো।আমার কিন্তু টাকাগুলো কালকের মধ্যেই চাই।নোমান আর আমার সামনে দাঁড়ালো না। যেভাবে ব্যাটকাঁধে নিয়ে এসেছিল। সেভাবেই ব্যাট কাঁধে ফেলেবেরিয়ে গেল।আমার মন খারাপটা আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেল। তিনহাজার টাকা কালকের মধ্যে কোথায় থেকে জোগাড়করবো? নোমানের জন্য খারাপ লাগছে। আব্বা আম্মারএকমাত্র ছেলে হয়েও নিজের শখ আহ্লাদ পূরণ করতেপারছে না ও। আমাদের আর্থিক অবস্থা আগে এত খারাপছিল না। দাদুর বিশাল ব্যবসা ছিল। আর আব্বা ছিল সেইব্যবসার একমাত্র উত্তরাধিকারী। ইসরাত আপা আরআমার ছোট বেলা খুব বিলাষিতায় কেটেছে। রাবেয়াআর শিমুও সেই বিলাষিতার কিছুটা পেয়েছে। কিন্তুনোমানের জন্মের পরই আব্বার ব্যবসায় ধস নামে। সেইরেশ ধরেই আমাদের আর্থিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হতেথাকে। কিন্তু তাও আব্বা আর দাদু হতাশ হোননি। তারাদুজনেই নিজেদের সবটা দিয়ে ব্যবসার হাল ধরেন। কিন্ততারপরও শেষ রক্ষা হয় না। এক শীতের রাতে দাদু মারাযান। তাঁর মৃত্যুতে আব্বা মানসিক ভাবে খুব ভেঙে পড়েন।অত্যন্ত দূরদর্শী আর বুদ্ধিমান হিসেবে আব্বা বুঝেগেলেন তার আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল হতে এখন অনেকটাকঠিন। তাই তিনি আর ব্যবসার পিছনে টাকা নষ্ট না করেমেয়েদের বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এবং অল্পবয়সেই ইসরাত আপার বিয়ে দেন। ভাগ্য ভালো ইসরাতআপার স্বামী অত্যন্ত ভালো মানুষ। তিনি আপাকেতাকে মেনে নিতে অনেক সময় দেন এবং আপারপড়াশোনাও চালিয়ে নিয়ে যান। আপার বিয়ের পরআব্বা আমার বিয়ে দিতে উঠে পড়ে লেগে যান। কিন্তুআমার জোড়া যেন পৃথিবীতে আসেনি। কোনো ভাবেইতিনি আমার বিয়ের জন্য সুপাত্রের খোঁজ পাচ্ছিলেন না।উপরন্তু কেউ আমার গায়ের কালো রঙের জন্য আমাকেপছন্দও করতো। বছর পাঁচেক অনেক চেষ্টার পর আশাতীতফল না পেয়ে আমার বিয়ে নিয়ে আব্বা হতাশ হয়ে পড়েন।যেই আব্বা তার ব্যবসার লোকশানের পরেও ভেঙেপড়েননি। সেই আব্বা আমার বিয়ে নিয়ে হতাশাগ্রস্তহয়ে পড়েন। এইদিকে রাবেয়া আর শিমুও বেশ বড় হয়েউঠছিল। সাথে ওদের কিশোরী বয়সের সৌন্দর্যতা ফুলেররেনুর মতো প্রস্ফুটিত হচ্ছিলো। একসাথে তিন মেয়েরবিয়ের ভার আব্বার কাঁধে চেপে বসে। আব্বা চারদিকেশূন্য দেখতে লাগলেন। উপায়ন্তর না দেখে আমিআব্বাকে আমার আগে রাবেয়া আর শিমুর বিয়ে দিতেরাজী করাই। যদিও আব্বাকে রাজী করানো খুব সহজকাজ ছিল না। কিন্তু যা হওয়ার তা তো হবেই। তাই আমারছোট দুই বোনের বিয়ে আমার আগেই হয়ে গেল। ওদের দুইজনেরই খুব ভালো পরিবারে বিয়ে হয়েছে। কিন্তুবিপত্তি বাঁধলো ওদের বিয়ের পর। রাবেয়া আর শিমুরবিয়ের জন্য আব্বা অনেক টাকা ধার করেছিলেন। সেইটাকার শোধ দিতে গিয়েই এখন আমরা নিঃস্ব হয়েঅন্যের বাড়িতে আশ্রয়ে আছি। তবে এক সময় মিহিরভাইয়ের পরিবারও আমাদের বাড়িতে কয়েক বছর জন্যথেকে ছিলেন। তবে তাদেরকে আমরা তখন আশ্রিত মনেকরিনি। বরং মেহমান হিসেবেই গ্রহণ করে ছিলাম। তখনআমি সবে অষ্টম শ্রেণীতে উঠে ছিলাম। এক সন্ধ্যায়মিহির ভাইয়ের আব্বা তার স্ত্রী এবং চার সন্তান নিয়েআমাদের বাড়িতে এসে হাজির হোন। আংকেল তখনচাকরি সূত্রে ট্রান্সফার হয়ে নতুন এসেছিলেন এই শহরে।আর তিনি আব্বার দূর সম্পর্কের আত্বীয় ছিলেন। সেইসুবাদে সরল মনের মিশুক আব্বা তাদেরকে আমাদেরবাড়িতে থাকার আমন্ত্রণ জানান। আব্বা সেদিনতাদেরকে মেহমান হিসেবে পরিচয় করে দিয়েছিলেনআমাদের সাথে। মিহির ভাই তখন কলেজে পড়তেন।আমাদের সবার সাথেই উনাদের খুব ভাব হয়ে গিয়েছিল।মিহির ভাইয়ের ছোট দুই বোন রিধি আর নিধি ছিলআমাদের প্রায় সমবয়সী। বয়সের খুব বেশি পার্থক্য ছিলনা আমাদের মধ্যে। আর তার ছোট ভাই নাহিদ নোমানেরচেয়ে বছর খানেকের বড় ছিল। তিন বছর থেকে ছিলেনতারা আমাদের সাথে। তারপর একদিন নিজেদের বাড়িকরে চলে যান তারা। কিন্তু আজ এত বছর পর মিহিরভাইয়ের পরিবারের সেই সব কথা মনে নেই। তাই তোমাত্র কয়েক মাসেই আমাদের প্রতি অসহ্য হয়ে পড়েছেনতারা। আমাদের এই বাড়িতে থাকা মোটেও পছন্দ নাতাদের। কিন্তু নিরুপায় হয়েই আব্বা আমাদের নিয়েএখানে থাকছেন। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ স্বার্থপর হচ্ছি আমরামানুষেরা। যেখানে আমরা স্বয়ং আল্লাহপাকেরনেয়ামতেরই শোকরিয়া আদায় করতে টালবাহানা করি।সেখানে একে অপরের দয়া মায়া আর আন্তরিকতাকীভাবে মনে রাখবো!আর কিছুক্ষণ পরেই সন্ধ্যা নেমে আসবে। ছাদ থেকে তোএখনো শুকনো কাপড়গুলো আনা হয়নি। আমি শাড়িরআঁচলটা সারা শরীরে জরিয়ে নিয়ে ছাদে যাওয়ার জন্যপা বাড়ালাম। ছাদে আসতেই মাগরিবের আযান শুরু হয়।তাড়াহুড়ো করে শুকনো কাপড়গুলো নিয়ে চলে আসার জন্যপা বাড়াতেই একটি রাশভারী কণ্ঠস্বর শোনতে পাই," তোমার এতবড় সাহস, আমার নিষেধের পরও এখনো এইকালো শাড়ি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছো....।
চলবে