Friday, December 21, 2018

চোর পালনই রকির 'পেশা'

হযরত আলী ওরফে রকি
রু-ছাগল বা হাঁস-মুরগি পালনের কথা তো হরহামেশা শোনা যায়। তবে হযরত আলী ওরফে রকি এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। সে অন্তত ২০ জন চোরের একটি দলকে 'পালন' করে! তার পোষা চোরেরা রাতের বেলায় বিভিন্ন বাড়ির গ্রিল কেটে ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন বা স্বর্ণের গহনার মতো মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে। সেখানেই তাদের দায়িত্ব শেষ। চোরাই মালপত্র বিক্রি, চোরদের থাকা-খাওয়া, ছোটখাটো ঝামেলা সামলানো বা ধরা পড়লে জামিনের ব্যবস্থা- সবই করে দলনেতা রকি। বিনিময়ে চোরাই পণ্য বিক্রির টাকার বড় অংশই যায় তার পকেটে। সম্প্রতি রকি ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে বের হয়ে আসে এসব তথ্য। তারা আরও জানিয়েছে, চুরি করা ইলেকট্রনিক পণ্যগুলো রাজধানীর অভিজাত বিভিন্ন বিপণিবিতান ও দোকানে বিক্রি হয়।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঢাকা অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, গ্রিল কেটে চুরির অনেক ঘটনা ঘটলেও এতে জড়িতদের শনাক্ত করা বেশ কষ্টকর। সম্প্রতি মিরপুরের এক ব্যক্তির অভিযোগের সূত্র ধরে চোরের একটি চক্রকে শনাক্ত করা গেছে। আশা করা হচ্ছে, তাদের মাধ্যমে চক্রের অপর সদস্যদেরও আইনের আওতায় আনা যাবে।[post_ads]

তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা জানান, মিরপুর-২ নম্বরের বড়বাগ এলাকার বাসিন্দা ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বাসায় অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে চুরি হয়। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, 'স্যামসাং নোট-৫' ও 'স্যামসাং এস-৬' মডেলের দুটি ফোন ছাড়াও অ্যাপল ম্যাকবুক, আসুস ল্যাপটপ, পোর্টেবল হার্ডডিস্ক, নগদ পাঁচ হাজার টাকাসহ মোট আড়াই লাখ টাকার মালপত্র চুরি হয়েছে। তার ছেলের ঘরের জানালার গ্রিল কাটা অবস্থায় ছিল। এ মামলার তদন্তে নেমে চোর চক্রের সদস্যদের অবস্থান জানতে পারে পিবিআই। এরপর ২০ নভেম্বর রাতে চোরাই পণ্য বিক্রির সময় মিরপুরের মনিপুর স্কুলের সামনে থেকে চক্রের প্রধান হযরত আলী ওরফে রকিসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। অপর দুজন হলো শাহিন ও সগির ওরফে রাজু। তাদের কাছ থেকে ল্যাপটপ, কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক, মোবাইল ফোনসহ বেশ কিছু চোরাই মালপত্র জব্দ করা হয়।

গ্রেফতার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া পিবিআইর পরিদর্শক মোহাম্মদ জুয়েল মিঞা জানান, সাভারের আমিনবাজার এলাকায় রকির একটি বাড়ি আছে। তবে সে খুব কম সময়ই সেখানে থাকে। ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় থাকে তার দলের সদস্যরা। তাদের মধ্যে সবচেয়ে দক্ষ হলো সগির ওরফে রাজু। সে সাভারের কাউনদিয়া বালুরমাঠ এলাকার একটি নির্জন স্থানের কুঁড়েঘরে একা থাকে। সারাদিন সে ঘুমায়। সন্ধ্যার পর খাল পাড়ি দিয়ে লোকালয়ে আসে। মোহাম্মদপুর, আদাবর,

মিরপুর ও ধানমন্ডি এলাকায় সে ঘুরে বেড়ায়। মূলত সে উপযুক্ত বাড়ি খোঁজে, যেখান থেকে চুরি করা যাবে। পাইপ বেয়ে সে অনায়াসে সাত বা আটতলা ভবনে উঠে যেতে পারে। কোনো বাড়ির কার্নিশ থাকলে বা দুটি ভবন পাশাপাশি হলেও সে তরতর করে উপরে উঠে যায়। এরপর ফ্ল্যাটের জানালা বা বারান্দার গ্রিল কেটে ভেতরে ঢুকে পড়ে। শেষে চোরাই মালপত্র দলনেতা রকিকে বুঝিয়ে দিয়ে সে আবারও ফিরে যায় তার নির্জন ডেরায়। মালপত্র বিক্রি করে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা রকিই তাকে পৌঁছে দেয়। দলের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্ত অপর সদস্যরাও টাকার ভাগ পায়।[post_ads_2]

মোহাম্মদ জুয়েল মিঞা আরও জানান, সাধারণত চোরাই ইলেকট্রনিক পণ্যগুলো পান্থপথ, এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট, মিরপুর ও সাভার এলাকার কিছু অভিজাত বিপণিবিতান ও দোকানে বিক্রি করা হয়। দামি ল্যাপটপগুলো তারা বিক্রি করে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায়। আনিস নামে এক ব্যক্তি চোরাই পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে রকিকে সহায়তা করে। রকির অধীনে থাকা ২০-২৫ জন চোরের যাবতীয় দায়িত্বই তার। যখন কোনো কারণে তারা চুরি করতে পারে না, তখন তাদের হাত খরচের টাকাও দেয় রকি। রাজু এর আগে দারুসসালাম থানার একটি মামলায় কারাগারে গেলে রকি তার জামিনের ব্যবস্থা করে।

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর এসআই আলমগীর ভূঁইয়া জানান, চোরদের এই চক্রটির বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তাদের তথ্যমতে চোরাই মালপত্র বিক্রির সঙ্গে জড়িত কয়েকজন দোকান মালিকের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

সমকাল

No comments:

Post a Comment

Copyright © স্বাধীন নিউজ

Canvas By: Fauzi Blog Responsive By: Muslim Blog Seo By: Habib Blog