![]() |
ছবি-ইন্টারনেট |
নির্বাচনের বাকী আছে আর মাত্র কয়েক দিন। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাঠ এখনো অধরা। নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই ভোটের মাঠে ক্ষমতাসীন দলের প্রতাপে কোনঠাসা বিএনপি। অনেকটাই ‘একতরফা’ নির্বাচনের আবহ। দেশজুড়ে হামলার শিকার হচ্ছেন ধানের শীষের প্রার্থীরা। পোস্টার পর্যন্ত সাঁটাতে পারেননি অধিকাংশ প্রার্থী। রাজধানীতে ধানের শীষের পোস্টারের দেখা মিলছে কালেভদ্রে। ১৫ জন প্রার্থীকে ইতোমধ্যে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আদালতের আদেশে আরো ১৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী শূণ্য হয়ে গেছে। এরকম অবস্থায় বিএনপি নেতাদের ভাষায়- ‘দাঁতে দাঁত চেপে’ তারা নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন। শেষ পর্যন্ত থাকতেও চান।
আগামী ২৪ ডিসেম্বর সেনাবাহিনী মোতায়েনের পর বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা সর্বাত্মকভাবে মাঠে নামার পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে। নেতাদের আশা- দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী মাঠে নামার পর পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করবে।
নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে জানিয়েছে, ২৪ ডিসেম্বর সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে। যারা ২ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবে। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সশস্ত্র বাহিনী নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। সেক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে একজন করে নির্বাহী হাকিম দায়িত্ব পালন করবেন। কয়েকদিন আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা বলেছেন, সেনাবাহিনী পরিস্থিতি অনুযায়ী গ্রেফতারও করতে পারবে।
ধানের শীষের একাধিক প্রার্থী ও বিএনপি নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, সেনা মোতায়েনের পরে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও নিরপেক্ষ অবস্থার দিকে মোড় নিবে বলে তাদের ধারণা। এজন্য আগামী তিন/চার দিন নেতাকর্মীদের গ্রেফতার এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে। পরিবেশ না থাকলে বড় পরিসরে গণসংযোগের ঝুঁকিতেও যাবেন না তারা। ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বল্প পরিসরে গণ সংযোগ, ভোটের দিনের প্রস্তুতি, কেন্দ্র ভিত্তিক কমিটি গঠন, পোলিং এজেন্টদের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত ও সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমে প্রচারনা চালিয়ে যাবেন প্রার্থীরা। আর ২৪ ডিসেম্বর পর থেকে বড় আকারে নির্বাচনী প্রচারনায় নামবেন।
ঐক্যফ্রন্টের একাধিক নেতা বলেছেন, নির্বাচনের শেষ সপ্তাহে তারা সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে সর্বাত্মক মাঠে নামতে চান। প্রার্থীদেরও সে ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিএনপি ও ফ্রন্টের নেতারাও প্রচার-প্রচারণা আরো বাড়িয়ে দেবেন। ড. কামাল হোসেন এখনো গণসংযোগে নামনেনি। তিনি ঢাকা ও এর আশপাশে শিগগিরই নির্বাচনী প্রচারণা চালাবেন বলে জানা গেছে।
গতকাল বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যফন্টের আহবায়ক ড. কামাল হোসেন ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকার প্রতিটি আসনে জনসভা ও গনমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। একইসাথে নির্বাচনের তিন দিন আগে ২৭ ডিসেম্বর দুপুর ২টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ফ্রন্টের উদ্যোগে জনসভা হবে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, ওই সমাবেশে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে চূড়ান্ত বার্তা দেবে ঐক্যফ্রন্ট। ঢাকাবসীর কাছে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে ধানের শীষের পক্ষে ভোটও চাইবেন ফ্রন্টের নেতারা।
গত ১১ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণার শুরুর প্রথম দিন থেকেই বিএনপির প্রার্থীরা কোনঠাসা । বিক্ষিপ্তভাবে কিছু জায়গায় মিছিল ছাড়া সারা দেশে স্বাচ্ছন্দ্যে প্রচারণায় নামতে পারেননি ধানের শীষ প্রতীকের প্রাথীরা। প্রথম দিনেই ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিনসহ ভোলা, জামালপুর, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, শেরপুর, ফরিদপুর, নেত্রকোণা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলায় বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা, কার্যালয় ভাংচুর, নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশীর ঘটনা ঘটে। প্রচারনার দ্বিতীয় দিনে আরো ভয়াবহ রূপ নেয়। এদিন দেশে অন্তত ১৮ জেলায় সংঘাত ও প্রচারে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলা হয়, নোয়াখালীর কবিরহাটে বিএনপির সিনিয়র প্রার্থী মওদুদ আহমদের মিছিলে হামলার ঘটনা ঘটে এবং নরসিংদীতে বিএনপির সিনিয়র মঈন খানের নির্বাচনী প্রচারণায় হামলায়। গত ১০ দিন ধরে এ ধরনের ঘটনাই ঘটছে।
এদিকে ২০ দলের ১৬ জন প্রার্থীকে ইতোমধ্যে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এরা হলেন রাজশাহী-৬ আসনের আবু সাঈদ চাঁদ, মাগুরা-১ মনোয়ার হোসেন, টাঙ্গাইল-২ সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, গাজীপুর-৫ ফজলুল হক মিলন, নরসিংদী-১ খায়রুল কবির খোকন, গোপালগঞ্জ-৩ এসএম জিলানী, কুমিল্লা-১০ মনিরুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৯ ডা. শাহাদাত হোসেন, চট্টগ্রাম-১৫ শামসুল ইসলাম, কক্সবাজার-২ হামিদুর রহমান আযাদ, সাতক্ষীরা-২ আবদুল খালেক, খুলনা-৬ আবুল কালাম আজাদ, ঠাকুরগাঁও-২ আবদুল হাকিম, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া-১ রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা, যশোর-২ আসনে মুহাদ্দিস আবু সাঈদ। এছাড়া আদালতের আদেশে এ পর্যন্ত ১৩ আসনে প্রার্থীশূন্য হয়ে গেছে বিএনপির। প্রার্থী শূণ্য হওয়া আসনে নির্বাচন স্থগিত রাখার আহবান জানিয়েছে বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন নির্বাচনের পরিবেশ প্রসঙ্গে বলেন, সারাদেশের মানুষ ধানের শীষের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার অপেক্ষায় আছেন। সেটি বুঝেই ক্ষমতাসীনরা বেসামাল আচরণ করছে। ভোটের দিনে যাতে কোন কর্মী বিএনপির পক্ষে কাজ না করতে পারে, কেন্দ্রে থাকতে না পারে সেই পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। আদালতে জামিনের জন্য গেলে আদালত প্রাঙ্গন থেকেই গ্রেফতার করা হচ্ছে কর্মীদের। এতো প্রতিকূলতা সত্বেও বিএনপি মাঠে আছে, শেষ পর্যন্ত থাকবে।
নয়াদিগন্ত
No comments:
Post a Comment