![]() |
ছবি-ইন্টারনেট |
জাতীয় সংসদের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে থাকা জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের হত্যার হুমকি দিয়ে উড়োচিঠি পাঠানো হচ্ছে। এরই মধ্যে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা, ফরিদপুরের ডিসি, মাদারীপুরের ডিসি, বরগুনার ডিসি, সিরাজগঞ্জের ডিসি এবং ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এ ধরনের চিঠি দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের সময় জেলা প্রশাসকরা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন।
এদিকে হত্যার হুমকিতে বিভাগীয় কমিশনার এবং ডিসি ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের মাঝে নতুন করে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় অনেক বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চিঠি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এ ধরনের কোনো তথ্য আসেনি।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, যেসব এলাকায় জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তারা হত্যার হুমকির চিঠি পেয়েছেন তারা এখনো নির্বাচন কমিশনকে জানাননি। ডিসিদের যদি বোমা মেরে উড়িয়ে দিতে চায় তার পরও সরকারি দায়িত্ব পালন করা উচিত। যদি কোনো ডিসি দায়িত্ব পালন করতে না পারেন তাদের প্রত্যাহার করা হবে। তিনি বলেন, ডিসিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নিরাপত্তা চাইতে পারে।
জানা গেছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল মান্নানকে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে টেলিফোনে হুমকি দেয়া হয়েছে। এমনকি ফোন করে হত্যারও হুমকি দিচ্ছে। বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান বলেন, আমাদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন ও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। টেলিফোনে দেশ-বিদেশ থেকে হত্যার হুমকি এবং অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করা হচ্ছে।
ফরিদপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা উম্মে সালমা তানজিয়া এবং বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এটিএম শামীম হাসানকে হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ফরিদপুরের ডিসি উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, ডাকযোগে একটি চিঠি আমি পেয়েছি, লাল কালি দিয়ে লেখা চিঠিতে নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে হুমকি দেয়া হয়েছে। রাতে বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। যে কোনো মূল্যে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না। যদি এমন হয় তা হলে দায়িত্ব পালনে কিছুটা সমস্যা হবে।
মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, মাদারীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুল ইসলামকে নাম ঠিকানাবিহীন এক পাতার চিঠিতে তাকে ও তার পরিবারকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে। এ ঘটনার পর জেলা প্রশাসকের বাসভবন ও অফিসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ডিসি ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, বুধবার অফিসে চিঠির ডাক এসেছিল। তার সঙ্গে একটি চিঠির খাম আসে। এতে লাল কালিতে লেখা ছিল ‘অতীব গোপনীয়’ বিষয়। আরো লেখা ছিল, নির্বাচনে নিরপেক্ষতা বজায় না রাখলে আমাকে ও আমার পরিবারকে দেখে নেয়া হবে। চিঠিটি হাতে লেখা ছিল, তবে কারো নাম লেখা ছিল না। চিঠিতে লেখা হয়েছে, জনাব, আপনি আমাদের সালাম গ্রহণ করন। আশা করি, ভালো থাকবেন। তবে বর্তমান সময়ে আপনার সব কার্যকলাপ, তৎপরতা আপত্তিকর, পক্ষপাত দুষ্টে দুষ্ট। আপনি কি প্রজাতন্ত্রের?? আওয়ামী লীগের কর্মী?? আপনারা হয়তো সব খবর রাখেন না?? নির্বাচনের আগে পরে কিছু তো হবে। কেউ বসে নাই তাই আপনার প্রতি অনুরোধ আগামী ৩ দিনের মধ্যে ১০০% নিরপেক্ষ হয়ে যান। হতে হবে। অন্যথায় অ্যাকশন। আপনার পরিবার, পরিজন, আত্মীয়স্বজন, স্থাবর অস্থাবর সকল স্বার্থের ওপর চরমভাবে আঘাত করা হবে। ডিসি বলেন, চিঠির শেষে কারো নাম লেখা ছিল না। শুধু লেখা ছিল চলমান। এর অর্থ হতে পারে তারা আবারো এ বিষয়ে হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠাতে চায়। তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আমি বিষয়টি লিখিত আকারে জানিয়েছি। এ ঘটনার পর থেকে পুলিশ প্রশাসন দিয়ে আমার বাসা ও অফিসে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
বরগুনা প্রতিনিধি জানান, বরগুনার জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. কবির মাহমুদকে উড়োচিঠি দিয়ে হুমকি দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গত বৃহস্পতিবার ডাকযোগে ওই চিঠি তার কাছে পাঠানো হয়। ডিসি কবির মাহমুদ বলেন, ডাকযোগে একটি চিঠি আসে আমার নামে। পরে সেটি খুলে দেখতে পাই, বরগুনার দুটি সংসদীয় আসনের নির্বাচন নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যদের ক্ষতি সাধনের জন্য হুমকি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশ তার এবং পরিবারের সদস্যদের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, উড়োচিঠিতে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও তার পরিবারকে হুমকি দেয়া হয়েছে। বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে ডিসি অফিসের ঠিকানায় এই চিঠিটি আসে।
প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, খাকি রঙের খামে এক পাতার এই চিঠিতে প্রেরকের নাম-ঠিকানা নেই। বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।
ডিসি কামরুন নাহার সিদ্দিকা আরো বলেন, চিঠিতে বলা হয়েছে আমার কর্মকাণ্ড তারা খেয়াল করছে। তিনদিনের মধ্যে আমি যদি ঠিক না হই তাহলে তারা আমাকে দেখে নেবে। শুধু আমাকে না আমার আত্মীয়স্বজন ছেলে মেয়ে সম্পত্তির ওপর তারা নজর রাখছে। ঠিক না হয়ে গেলে তারা আক্রমণ চালাবে। চিঠির শেষের অংশে লেখা আছে চলমান।
ইনকিলাব
No comments:
Post a Comment