Sunday, December 2, 2018

কেন এই মৃত্যু ?

ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি থমথমে। শেষ খবর কী? কেউ জানে না। কাশেমকে বাঁচানো সম্ভব হবে কিনা ডাক্তররা ঠিক করে কিছু বলছেন না। শুধু এতটুকু বলেছেন, আপনারা আল্লাহকে ডাকুন। তিনি জীবন দেয়া-নেয়ার মালিক।
শেষ ভরসা শুধু তিনি।
তবে এরকম অবস্থা থেকে কেউ ফিরে আসে নি।

আচ্ছা কাশেম যদি মারা যায়, ওর প্রতিষ্ঠানে কি কোন শোক সভা হবে ? দোয়া- মিলাদ? কালো ব্যাচ ধারণ কিংবা কাশেমের অকাল মৃত্যুর জন্য কি ব্যানার টাঙ্গানো হবে? 
কিছুই হবে না ? 
কি আশ্চার্য এই পৃথিবীর রীতি, কাশেমের একটা ভুল কেউ ক্ষমা করবে না ?

মেসের জীবন। কারো খোজ- খবর কেউ রাখে না। কেউ ভালো করলে নিজের গরজে করে। আবার কেউ খারাপ করলেও নিজের দোষে করে। এই জীবনে সহজে নষ্ট হবার বহু সুযোগ থাকে। যে এসব থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে, সে একদিন সমাজে মাথা উচু করে দাড়াতে পারে। মানুষ তাঁকে সম্মান করে।
রাহাত ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে তড়িঘড়ি করে ক্লাসে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সকাল আটটায় ক্লাস শুরু। স্যার ঠিক আটটায় চলে আসেন। 
সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে- আর মাত্র কয়েক মিনিট বাঁকি। অথচ তার রুমমেট তখনো ঘুমাচ্ছে।
রাহাত ডাকলো, প্রত্যয় ওঠ, ওঠ। কিরে, তুই কি আজও ক্লাসে যাবি না ?
কিছুক্ষণ পর আবারও প্রশ্ন করলো, কিরে, যাবি ?
প্রত্যয় আলতোকরে চোখ খুললো তারপর ঘুমের ঘোরে বললো, তুই যা, ক্লাস কর। আমার ক্লাস লাগে না।
প্রত্যয়, তুই না ক্লাস ক্যাপ্টেন ?
আরে যা, ক্যাপ্টেন বলেই তো ক্লাসে যাই না।
রাহাত রুমের দরজাটা আস্তে করে চাপিয়ে দিয়ে ক্লাসে চলে গেল।
প্রত্যয় আবার ঘুমালো, গভীর ঘুম।

প্রত্যয় একদম ক্লাস করে না। সারাদিন ঘুমায়। বিকালে বের হয়, অনেক রাতকরে ফেরে। এখানে সেখানে আড্ডাবাজি করে বেড়ায়। এইতো কিছুদিন আগে ক্লাসমেটরা অনেকে মিলে আড্ডা দিচ্ছিল। হঠাৎ ক্লাসের সেকেন্ড ক্যাপ্টেন প্রত্যয়কে বললো, দোস্ত আমার তো মাঝে মাঝে রাতে ঘুম আসে না। খুব টেনশন হয়, চাকরি- বাকরির যা অবস্থা, যদি কিছু একটা করতে না পারি, তবে কি যে হবে ?
এত কষ্ট করছি, এত টাকা খরচ করছি, সময়ের মত সময় চলে যাচ্ছে, শেষমেষ যদি কিছু না হয়। মা- বাবাকে কী জ্ববাব দিবো ? সমাজে মুখ দেখাবো কী করে ?

রাসেলের উদ্বেগ, ভবিষ্যৎ ভাবনাকে পাত্তাই দিলো না প্রত্যয়। সে বলে, কি যে বলিস ! আমি এসব নিয়ে ভাবি না। চাকরি- বাকরি এমনিতেই হয় না। প্রসেস লাগে প্রসেস। তখন একটা সিস্টেম আমি করেই ফেলবো। আর তা যদি না-ই হয়, বাপের আট-দশটা বাস ট্রাক আছে না। বাপ দাদার পুরান ব্যবস্যা, গাড়ির ব্যবস্যায় নামবো। এই আর কী ?
কথা শেষে মিদুল বলে, দোস্ত তোর তো একটা গতি হবে, শুনেছি তোদের অনেক ধন-সম্পদ আছে। আর তাছাড়া তোর লাইফ স্টাইল, মোবাইল ব্যান্ড এসবই তো বলে দেয়, তোর বাপের যা আছে, তাতেই তোর চলবে। কিন্তু আমরা যে কী করবো ? গত সেমিস্টারে টেনে টুনে পাশ করেছি, দুই সাবজেক্ট রেফার্ড ছিলো। এবার যে কী হবে ?
শোন মিদুল, এসব পাশ-ফেল নিয়ে ভাবিস না। কিছু টাকা জমা কর, একটা সিস্টেম করে দিবো, দেখবি সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। দেখিস না, আমিতো পড়ি না। কিন্তু দ্যাখ, রেজাল্ট তোদের চেয়ে ভালো। 
কথার ফাঁকে এক সময় মনির নামের এক বড় ভাই সেখানে চলে আসে। তাকে দেখে প্রত্যয় বলে, এই তোরা থাক, আমাকে যেতে হবে। মনির ভাই আমাকে ডিপার্টমেন্টে নিয়ে যাবে। স্যারের সাথে আলাপ আছে।

প্রত্যয় চলে যাবার পর রাসেল প্রশ্ন করে, আচ্ছা তাই তো গত সেমিস্টারে প্রত্যয়ের রেজাল্ট ভালো, কী করে সম্ভব ? আমরা রাতদিন এক করে লেখাপড়া করছি আর ও তো বই-ই খোলে নি।
কিরে রাহাত তুই তো ওর রুমমেট, তুই কিছু জানিস? 
হ্যা রাসেল, ও তো ঠিকমত লেখাপড়া করেনি। 
তবে কি যেন প্রসেস, প্রসেস বলে। ও তো বলে, সিস্টেম করে ভালো রেজাল্ট করেছি।

প্রত্যয় আস্তে আস্তে বন্ধুদের মাঝে প্রচার করতে থাকে তার সাথে কন্টাক্ট করলে সে ভালো রেজাল্ট এনে দেবে। 
পরীক্ষা যত কাছে আসতে থাকে প্রত্যয় ততই তৎপর হয়ে ওঠে। একসময় ভিতরে ভিতরে ব্যাপারটা পুরো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। দিন দিন প্রত্যয়ের সাঙ- পাঙ বাড়তে থাকে। এই সাঙ- পাঙরাই প্রতিনিধির মত কাজ করে। তারা প্রথমে দূর্বল শিক্ষার্থীকে টার্গেট করে। তাদেরকে বলে এইবার সাবজেটগুলো খুব কঠিন। এমনিতে পাশ করা যাবে না।
আবার অন্যভাবে বলে, একটা সাবজেক্ট প্রাইভেট পড়লে কমছে কম তিন হাজার টাকা লাগতো। আবার সেখানে আসা-যাওয়া, পড়া মনে রাখা ইত্যাদি, ইত্যাদি। ঝামেলা।
তার চেয়ে সিস্টেম করাই সহজ।

সেদিন কাশেম আর জগলু একসাথে বসে মাঠে খেলা দেখছিল। বিভিন্ন কথার মাঝে কাশেম জগলুকে প্রস্তাব দেয়, আমরা সবাই দিচ্ছি, জগলু তুই দিবি নাকি ?
স্বভাবতই জগলু প্রশ্ন করে, কী দিচ্ছিস দোস্ত ?
উত্তরে, বুঝলি না, সিস্টেম, সাবজেক্ট প্রতি দুই হাজার।
যদি মার যায়?
আমরা আছি না ?
তোরা টাকাটা কাকে দিচ্ছিস ?
প্রত্যয়কে। ও মনির ভাইয়ের মাধ্যমে কাজ করে দিবে।
সত্যি কাজ হবে তো ?
হবে না মানে ১০০% সিউর কাজ হবে। বিশ্বাস না হলে প্রত্যয়ের রেজাল্ট চেক করে দেখতে পারিস।

জগলু কিছুক্ষণ ভেবে নেয়। এরপর বলে, দোস্ত আমারতো তিন সাবজেক্ট প্রোবলেম পাঁচ দিলে হবে না।
শোন জগলু, তোদের এই এক সমস্যা। প্রত্যয় কাজটা করে দিবে এটাই তোদের ভাগ্য আর বলছিস কমিশন। যা ভাই তোর দেয়া লাগবে না, তুই পড়েই পাশ করিস।
নারে কাশেম, পড়ার আর সময় কই ?
সারাদিন মেসেঞ্জারে থাকি, তাও মোর পাখি মাঝে মাঝে উড়াল দিবার লয়। দোস্ত আমার উপর রাগ করিস না, আমি পুরোটাই দেবো। আমার রোল আর সাবজেক্ট কোডগুলো লেখে নে।
এখন শুধু রোল বল, টাকা বুঝে দিলে সাবজেক্ট কোড লিখবো।

প্রতিষ্ঠানে অনেক ধরনের দূর্বল শিক্ষার্থী আছে। কেউ সত্যিকারের দূর্বল, কেউ ক্লাস না করে দূর্বল আবার কেউ কেউ ইচ্ছাকৃত দূর্বল। সব দূর্বল মিলে বহু সাবজেক্ট ব্যাপার হয়ে দাড়ায় সেই সাথে বিশাল অংকের টাকা জমা পড়ে। সেই টাকা দিন শেষে জমা হয় প্রত্যয়ের কাছে। যে টাকা তুলে আনে সে সাবজেক্ট প্রতি কমিশন পায় পাঁচশত আর প্রত্যয় নেয় পাঁচশত। তারপর প্রতি কোড হাজার টাকা হিসাবে যা হয় রাতে মনির ভাইকে দিয়ে আসে।
যথা সময়ে পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। এই পরীক্ষায় কেউই ঠিকঠাক উত্তর করেনি। এক ঘন্টা পর পরীক্ষার হল প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। সবার মনে একটা ভাবনা, পাশের জন্য টাকাই যদি দেব, তবে আর খাতায় লেখবো কেন ?
পূর্বনির্ধারিত দিন বিকালে বোর্ড রেজাল্ট পাবলিশ করে। রাহাত, রাসেল আর দুই চার জন যারা সিস্টেম করেনি তারা পাশ করে। এছাড়া মোটামুটি সবাই ফেল করে। ফেসবুকের মাধ্যমে মূহুর্তের মধ্যে খবরটা প্রচার হয়ে যায়। সবাই প্রত্যয়ের উপর ক্ষেপে যায়। আবার নিজেদের রেজাল্টের আফসোসে চোখে পানি চলে আসে। আস্তে আস্তে তারা জড়ো হতে থাকে। ক্ষোভে- ক্রোধে সবাই মিলে প্রত্যয়ের মেসের দিকে অগ্রসর হয়।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে সিধান্ত হয়, প্রত্যয়রা প্রচুর টাকার মালিক। ওকে আটকে রেখে ওর বাবার থেকে সব টাকা আদায় করা হবে। যেন তেন ব্যাপার না, সব মিলে প্রায় সাড়ে নয় লাখ টাকা। সবার একটাই প্রশ্ন, শালা পাশ করাতে পারবি না, টাকা নিলি ক্যান ?
রেজাল্টে ফেল করে প্রত্যয়ের সাঙ-পাঙরা জীবন নিয়ে পালিয়ে যায়। বিপদে পড়ে শুধু কাশেম। সে বিকালে ঘুমিয়ে ছিল। কাশেম প্রত্যয়ের মেসে থাকতো। ক্ষুদ্ধ ছাত্ররা প্রত্যয়কে না পেয়ে কাশেমকে পেয়ে যায়। প্রত্যয়ের ওপরের রাগটা সবাই কাশেমের উপর ঝাড়ে। কাশেম গনধোলায়ের শিকার হয়। কাশেমের চোখ বেধে যার যা খুশি মারতে থাকে। কেউ ঘুসি মারে, কেউ লাথি মারে আবার কেউ স্টীলের স্কেল দিয়ে আঘাত করে। এসময় কাশেম ওমা, ওমা, আমাকে বাঁচাও বাচাও বলে চিৎকার করে। কেউ তার আর্তনাত শোনেনি। এক সময় মাইরের চোটে কাশেমের কন্ঠস্বর থেমে যায়। সে দিশেহারা হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তখন কেউ একজন বলতে থাকে, আর মারিস না, আর মারিস না, হালায় মইরা যাইবো।
ফোন পেয়ে শহর থেকে ছুটে আসে মেস মালিক। ধরাধরি করে কাশেমকে দ্রুত হসপিটালে নিয়ে যায়। কাশেমের কোন সেন্স নাই। ডাক্তার তাকে ইমার্জেন্সিতে ভর্তি করে। ডাক্তার বলেছে, এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে অবস্থা বেশি ভালো না।
এদিকে ছাত্র হসপিটালে ভর্তির খবর পেয়ে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তাকে দেখতে যায়। তখনো কাশেমের সেন্স ফেরেনি। কর্তৃপক্ষ ঘটনার কারণ জানতে গিয়ে জেনে যায়, পাশ করিয়ে দেবার কথা বলে মনির নামের এক শিক্ষার্থী সবার কাছ থেকে টাকা তুলেছে।
খোজ খবর নিয়ে মনিরের নম্বরে ফোন দেন ভাইস প্রিন্সিপাল স্যার । নম্বর বন্ধ। দু তিন বার ট্রাই করেও একই ফলাফল। 
এর মধ্যে একজন শিক্ষার্থী বলে ওঠে, স্যার, মনির ভাই আমাদের মেসে থাকতো। গত একমাস ধরে সে নিখোজ। তার খবর কেউ জানে না। পালিয়ে যাবার সময় রুমমেটের ল্যাপটপ আর মেস মালিকের মটর সাইকেল নিয়ে গেছে। তাঁরা বহুত খুজেছে। পায়নি।

কথা শেষ হলে স্যার জিজ্ঞেস করেন, মনিরের সাথে আর কে কে আছে? প্রথমেই চলে আসে প্রত্যয়ের নাম। 
প্রত্যয় স্যারের ফোন পেয়ে থর থর করে কাপতে থাকে। সে ভয়ে ভীত হয়ে পড়ে। স্যারকে অনুনয় বিনয় করে বলে, স্যার আমাকে বাঁচান, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে, আমাকে বাঁচান স্যার, বাঁচান।
শেষে নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রত্যয়কে প্রতিষ্ঠানের সিকিউরিটি ইন চার্জের হেফাজতে রাখা হয়। রাতেই প্রতিষ্ঠানের ভেরিফাইড পেজে জানানো হয়, আগামীকাল সকাল দশটায় মিটিং। সকলকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়।

সকাল থেকেই মিটিংয়ের জন্য সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। একজন একজন করে মিটিংয়ের লোকজন আসছে। সকাল নয়টার মধ্যে থানার দারোগা এসে হাজির। ফেলকরা কিছু শিক্ষার্থীর অভিভাবক আসছেন। অধ্যক্ষসহ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা ঠিক দশটায় উপস্থিত হলো। দুই হাত পিছনে বাধা প্রত্যয়কে আনা হলো। অধ্যক্ষ স্যার বললো, এই ছেলে তোমার বাবা আসছে ?
উত্তরে, না স্যার, আসেনি। কথা হয়েছে। সে আসছে। 
মিটিংয়ে লোক বেশি তাই প্রতিষ্ঠানের বড় আম গাছের নিচে মিটিং চলছে। অনেক বড় আয়োজন করা হয়েছে। 
কিছুক্ষণের মধ্যে মেইন গেট দিয়ে একটা খালি রিক্সা ঢুকলো। রিক্সাটি ঠিক মিটিংয়ের কাছে এসে থামলো। রিক্সাচালক বয়োঃবৃদ্ধ। সবগুলো চুল পাকা। লোকটি মাথার গামছাটা খুলে মুখের ঘাম মুছে মিটিংয়ের এক ফাঁকে দাড়িয়ে বললেন, আমি প্রত্যয়ের বাবা। 
পরিচয় দেবার পর উপস্থিত সকলে হতভম্ব হয়ে যায়। এই রকম আলট্রা মর্ডান ছেলের বাবা একজন রিক্সা চালক ! ভাবাই যায় না। 
কিছুক্ষণের জন্য পরিবেশ নিশ্চুপ হয়ে যায়।
পরে থানার দারোগা বললেন, আসুন, বসুন।
না স্যার। এখানে বসার মত মুখ আমার ছওল রাখে নাই।
এখানে আমি এক অপরাধীর বাপ। আইজ নিজের উপর খুউব রাগ হইতেছে , মান-সম্মান বইলা কিছু থাইকলো না। বলেই মাথাটা নিচু করলেন। 
তারপর প্রত্যয়ের বাবা কাদো কাদো স্বরে বললেন, স্যার আমি ঘটনা পুরাই শুনছি, মানুষ ছওল-মাইয়া লেহাপড়া হরায়, মাও- বাপের মুখ উজ্জ্বল হরার জন্য, হেদের মনে শান্তি আনার জন্য। আর আমার ছওল আমার মুহে কালি মাহাইছে, আমারে অপরাধীর কাঠগড়াই দাড় করাইছে। স্যার, আমি রিক্সা চালাই খাই, কারো এক পয়সা মাইরা খাই না, কেউ কোনদিন আমাক অপরাধী করবার পারে নাই। অথচ ছলের অকামে আইজ আমি এই বিচারের আইছি। ও মানুষের ট্যাহা নিয়ে ছল-চাতুরি করছে। ট্যাহা ইনকাম করতে কত কষ্ট হেতা আমি জানি। গায়ের রক্ত পানি করে, মাথার ঘাম পায়ে ফাইলা আমি রোজগার করি। দশটা ট্যাহার জন্য এই রিক্সায় কতগুইলা প্যাট্টেল দিতে হয়, হেডা আমি জানি।
স্যার বিশ্বাস হরেন, রিক্সা চালাই আর কয় ট্যাহাই ইনকাম হয়। ওর ট্যাহার কমতি যান না হয়, হেজন্য আমি বাজারে যাইয়া মাছ- মাংস কিনি না, ভালো জামা কাপড় গায়ে দেই না, ভালো ডাক্তার দেখাই না, নিজের ওষুধ পর্যন্ত ঠিকমত কিনি না।
আর ও এই তার প্রতিদান দিলো। ও এইভাবে আমাক ব্যহের সামনে অপমান করলো!
আমার বিচার হয়া গেছে, আইজ থাইকা আমি ও'র বাপ না।
কাদতে কাদতে বৃদ্ধ লোকটা বলে ফেললো, ওর মতো ছওল জন্ম দিয়া আমি যে পাপ করছি হের জন্য আপনাগোর কাছে ক্ষমা চাইতেছি, ক্ষমা চাইতেছি, ক্ষমা...।
বলতে বলতে বৃদ্ধ বাবা বুকে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করে মাটিতে বসে পড়ে। পরে ঊচ্চস্বরে কাশি দিতে দিতে এক সময় সেন্সলেস হয়ে যায়।
প্রতিষ্ঠানের গাড়িতে করে দ্রুত প্রত্যয়ের বাবাকেও একই হসপিটালে নেয়া হয়। যেখানে প্রত্যয়ের বন্ধু কাশেম জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দুলছে। দুজনের অবস্থাই ভীষণ খারাপ।

সেদিনের মত মিটিং পন্ডু হয়ে যায়। অধ্যক্ষ স্যার, পর দিন সকালে সবাইকে আবার আসছে বলছেন।
পরদিনের মিটিং চলাকালে, অধ্যক্ষ স্যার এই পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণ ও সমাধানের জন্য কী কী করণীয় সে বিষয়ে মতামত নিচ্ছিলেন।
ঠিক সেই সময় অধ্যক্ষ মহোদয়ের কাছে হাসপাতাল থেকে একটি ফোন আসলো। ফোন রিসিভ করে ওপাশের কথা শুনে স্যার চেয়ার ছেড়ে ওঠে দাড়ালেন। একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে কী যেন দেখলেন? বিড় বিড় করে দোয়া পাঠ করলেন। আস্তে করে মাথাটা যখন নিচের দিকে নামালেন, ততক্ষণে স্যারের দুচোখের অশ্রুতে বুকটা ভাসিয়ে গেল।
তিনি চোখ মুছতে মুছতে বললেন, একজন মারা গেছে।
প্রত্যয় হাউমাউ করে কেদে উঠলো।

লেখকঃ মোঃ হেদায়েতুল ইসলাম
টাঙ্গাইল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।
সিনিয়র শিক্ষক (ফিজিক্স)

No comments:

Post a Comment

Copyright © স্বাধীন নিউজ

Canvas By: Fauzi Blog Responsive By: Muslim Blog Seo By: Habib Blog