Friday, December 14, 2018

শাস্তি দিয়ে নয়, ভালোবাসা দিয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ

ছবি- ইত্তেফাক
কলেজ রোডে বখাটে ছেলেরা কলেজগামী মেয়েদেরকে উত্যক্ত করে। মাসিক ওপেন হাউজ ডে ছাড়াও এমন অভিযোগ প্রায়ই শুনতে হয় ওসির। পুলিশের নিয়মিত দায়িত্বের পাশাপাশি এসব অভিযোগে নিতে হয় আইনি ব্যবস্থা। অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা পুলিশের কাজ। ভালোবাসা দিয়েও যে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা দেখালেন চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ডু থানার অফিসার ইনচার্জ।

ঘটনা ৩ ডিসেম্বরের। সীতাকুন্ড কলেজ রোডে ওসি’র নেতৃত্বে চালানো হলো অভিযান। আটক হলো কয়েকজন কিশোর। থানায় চলছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ। হালকা গড়নের ছেলেটির কথায় থমকে গেলেন ওসি। লম্বা চুল, ক্ষীণকায় শরীর দেখে মনে হয় পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। সন্দেহ হয় সে নেশার সাথে জড়িত কি না। বাবার মোবাইল নম্বর চাইতেই ছেলেটি বললো তার বাবা বিদেশে থাকে। সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়। মোবাইল নম্বর নিয়ে ফোন দেয়া হলো তার মা’কে। কিন্তু এখানেও বিপত্তি। থানায় ছেলেকে নেয়া হয়েছে শুনেই তিনি জ্ঞান হারিয়েছেন। জ্ঞান ফেরার পর প্রতিবেশীরা নিয়ে এসেছেন থানায়। হাউমাউ করে কাঁদছে একমাত্র ছেলের মা। শুরুতেই জানা গেলো ছেলেটির বাবা বিদেশে থাকার কথাটি অসত্য। সন্দেহটা আরও বেড়ে যায়।

জানা গেলো ৮ বছর আগে ছেলেটির বাবা তার মা’কে ফেলে চলে গেছে। বিয়ে করে সংসার করছেন অন্যত্র। এক ছেলে আর দুই মেয়ে নিয়ে মায়ের রাত কাটেতো দিন কাটেনা। আত্মীয় স্বজনের সামান্য সাহায্যে কোন রকম দিনে এক বেলা খেতে পায় তারা। ছেলের মাথায় বড় চুল কেনো জিজ্ঞেস করতেই কান্নার স্বর গলা দিয়ে বের হতে চায় না মায়ের। দিনে তিন বেলা খেতে পায়না যে পরিবার সে পরিবারের ছেলে নিয়মিত চুল কাটার টাকা পাবে কোথায়!

জিপিএ ৪.৬৮ পাওয়া এ ছেলের নাম মাহিন। একাদশ শ্রেণিতে পড়া এ ছাত্রের বই বলতে কলেজের লাইব্রেরি থেকে ধার করা ৪টি বই। বোন দুটিও মেধাবী। বোন সামিয়া পড়ে নবম শ্রেণিতে। প্রতি বাৎসরিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান পাওয়ায় এবং গরীব ছাত্রী হিসেবে স্কুল থেকে প্রতি মাসে ১০ কেজি চাল, ৩ কেজি ডাল ও ২ লিটার সয়াবিন তেল পায় অনুদান হিসেবে। এর পরের ছোট বোন লামিয়া পড়ে তৃতীয় শ্রেণিতে।

এবার, কলেজের অধ্যক্ষকে ফোন দিয়ে মাহিনের পড়ালেখার খরচ বহন করার দায়িত্ব নেন ওসি। তারপর টাকা দিয়ে পাঠিয়ে দেন তাঁকে সেলুনে। চুল কেটে আবার আসতে বলেন। চুল কেটে সন্ধ্যার পর থানায় আসলে মাহিন ও তার মায়ের হাতে বই, খাতা, কলমসহ নতুন পোশাক কেনার জন্য নগদ পাঁচ হাজার টাকা তুলে দেন ওসি। এসময় থানায় উপস্থিত সাংবাদিকের ক্যামেরার ক্লিকের আলোয় উদ্ভাসিত হয় একটি সুন্দর মুহূর্ত।

লেখক- হাফিজুর রহমান 

No comments:

Post a Comment

Copyright © স্বাধীন নিউজ

Canvas By: Fauzi Blog Responsive By: Muslim Blog Seo By: Habib Blog